আমি খেয়াল করে দেখছি যে,আমাদের যাদের ফিন্যান্সিয়াল অবস্থা একটু নিম্ন পর্যায়ের,পোষাক পরিচ্ছেদে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া নাই,আচার-আচরণে কোনো দাম্ভিকতা নাই তাদের এই সমাজে মূল্য অংকের শূন্যের চেয়েও কম কিংবা আমাদের থাকা না থাকা তাদের কাছে কোনো ম্যাটার করে না।
আমাদের লিখা কবিতায় তারা মুগ্ধ হয় না।আমার বিশ্বাস কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতাটা আমাদের বর্তমানে লিখলে কেউ পড়তো না,শরীরে কাটা দেওয়ার জায়গায় বিরক্তি নিয়ে বলতো 'এই অখাদ্য পড়ে সময় নষ্ট'।
আমরা কখনো কারোর যোগ্য ভালোবাসার মানুষ হতে পারি নাই।'ইউ ডিজার্ভ বেটার' ক্যাটাগরিতে ফেলে দিয়ে মানুষজন সুখী জীবন কাটানো শুরু করে আমাদের এমনভাবে ভুলে যায় যেনো আমরা কখনো ছিলামই না।
ফ্রেন্ড সার্কেলে আমাদের কথা কেউ মনযোগ সহকারে শুনে নাই।বিশাল হাসির একটা টপিকে কথা বলতে শুরু করলেই তারা ইগনোর করে চলে যায় এদিক সেদিক।আমাদের হাসির মুখটা হঠাৎ দীর্ঘনিঃশ্বাসে পরিণত হয়ে যায়।
স্কুলে ভালো গ্রেড না পাওয়ার ফলে টিচারের বাহবাও পাই নি।কোনোদিন হাসিমুখে আমাদের সাথে তারা কথাও বলে নি।পড়া পারলেও তাদের কিছু যেতো আসতো না আর না পারলে বলতো 'তোমাদের মতো ছেলেদের কাছে এটাই তো আশা করা যায়'।
আমাদের নিয়ে গর্ব করার মতো কেউ কখনো ছিলো না।হোচট খেয়ে পড়ে গেলে কেউ হাত বাড়ানোর বদলে হাসার নিয়তিই ছিলো আমাদের।তাদের হাসি দেখে আমরা নিজেরাও হাসতাম কিন্তু ক্যানো তা জানতাম না।
আমরা ৫-৭ দিন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলেও কেউ গরজ করে খোঁজ নেওয়ার নাই।কপালে হাত দিয়ে জ্বরটা তীব্র বেড়েছে বলে একটু মাথায় পানি দেওয়ার জন্যও মায়া দেখায় না।
আমরা আসলে কোনোদিন কোনোকিছুতেই ছিলাম না।আমরা শুধু জন্মানো দরকার বলেই জন্মেছিলাম।আমাদের স্পেশাল কোনো গুণ না থাকার কারণে আমরা কখনো এই পৃথিবীতে ছিলামই না।রুহের জগত থেকে দুনিয়াতে এসেছিলাম শুধু অবহেলা,অযত্ন আর নিজের প্রতি অভিমান করার জন্য।
আপনি বলবেন আমি লাইফ নিয়ে উদাসীন,হতাশ।এই হতাশা,উদাসীনতা কি একদিন্র তৈরি হওয়ার মতো?এই যে কথাগুলো বললাম এই উপলব্ধি কি একটাও মিথ্যা?
আপনি কথাগুলোকে জাজ করতে পারবেন না এই কারণে যে আপনি কখনো আমাদের লাইফটা পান নি।আমাদের মতো মানুষের একটু এটেনশন,একটু ভালোবাসা,যত্ন পাওয়ার আক্ষেপে কখনো পুড়েন নি।
আমরা দিনশেষে এতটাই একা হয়ে উঠি যেনো বিশ্বভ্রামণ্ডের ভিতর একটি বিন্দু জন্ম নিয়েছিলো আর মুছে গিয়েছিলো কিন্তু কখনোই কেউ টের পায় নি।